ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস : অ্যাংলো স্যাক্সন যুগ
অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের কাব্য ও গদ্যসাহিত্য দ্বীপভূমিতে খ্রিস্টধর্ম প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নরম্যানদের বিজয় (Norman Conquest, 1066), এই সময়-সীমার মধ্যেই রচিত। অন্যান্য ভাষার সাহিত্যের মতো অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগেও কবিতা ছিলো গদ্যের পূর্ববর্তী। এইসব কাব্য - কবিতা ছিলো মৌখিক রীতির এবং অনুমান করা হয়ে থাকে যে এই সময়ের অনেক আদৃত রচনাই কালের গর্ভে বিলুপ্ত। মোট যে চারটি পুঁথিগত নিদর্শন বর্তমানে পাওয়া যায় সেগুলিও কতবার কতভাবে এক পুঁথি থেকে অন্য পুঁথিতে প্রতিলিপিবদ্ধ হয়েছে এবং সে-কারণে লিখিত রূপ আর মূল মৌখিক রূপের মধ্যে কতখানি পার্থক্য ঘটেছে তা বলা মুশকিল। এর মধ্যে অনেক রচনার সঠিক তারিখ ও রচয়িতার পরিচয়ও আমাদের অজ্ঞাত। অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপির প্রামাণিকতা নিয়ে সংশয় আছে। মোটের ওপর, ইংরেজি সাহিত্যের জন্মলগ্নে এ এক আলো- আঁধারি গোধূলি পর্ব। ধর্মান্তরিত জার্মান জাতিগোষ্ঠীভুক্ত পরদেশে বসতিস্থাপনকারী অ্যাংলো- স্যাক্সনদের সাহিত্যে খ্রিস্টধর্মের আদর্শ ও গুণাবলীর সঙ্গে সমন্বয় ঘটেছিলো তাদের পূর্বতন অ-খ্রিস্টানসুলভ রোমাঞ্চপ্রিয়তা, বিষণ্নতাবোধ ও মন্ময়তার। কাব্য সাহিত্যের তুলনায় গদ্য রচনায় ছিলো অধিকতর শৃঙ্খলা। বিশেষ করে রাজা আলফ্রেড (Alfred)-এর দরবারকে কেন্দ্র করে গদ্যচর্চার ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট যুগের সূচনা হয়েছিলো।
ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে খ্রিস্টোত্তর পঞ্চম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত কালপর্ব আদি-ইংরেজি বা অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগ হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকে। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে অ্যাঙ্গল্স্ (Angles) স্যাক্সন্স্ (Saxons) জু (Jutes) উপজাতিয়দের জার্মান স্বদেশভূমি থেকে গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপভূমিতে আগমন ও বসতিস্থাপনই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। এই অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিলো পঞ্চম শতকের মধ্যভাগে (আনুমানিক ৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে) এবং শতাধিক বৎসর কি তারও বেশি সময় ধরে চলেছিলো বসতি স্থাপনের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রক্রিয়া। কোথাও কোথাও ব্রিটনরা (Britons) সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও মোটের ওপর অ্যাংলো-স্যাক্সন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। দ্বীপভূমির নতুন নাম হয় ইংলন্ড— অ্যাঙ্গদের নামানুসারে। জার্মান- অধ্যুষিত ইংলন্ডের ‘খ্রিস্টীয়করণ' (Christianisation) শুরু হয় আইরিশ মিশনারিদের উদ্যোগে, আর এ-কাজে রোমের প্রতিনিধি রূপে আসেন সন্ত অগাস্টাইন ৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তী একশ বছর সময়ে (আনুমানিক ৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) এই ধর্মান্তরকরণের কাজটি সমাপ্ত হয়। ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসের এটিই উদ্বোধনী মুহূর্ত। আর এই সময়ই নর্দামব্রিয়ান (Northumbrian), মার্সিয়ান (Mercian), ওয়েস্ট স্যাক্সন (West
Saxon) ও কেন্টিশ (Kentish) উপভাষাগুলির স্বাতন্ত্র্য উপজাতিদের ভাষা রূপে ‘ওল্ড ইংলিশ' নামে চিহ্নিত হতে থাকে।
উপজাতি আগন্তুকদের সামাজিক জীবন ছিলো গোষ্ঠীনির্ভর। গোষ্ঠী বা ‘cyn' (> kin)- কে দুর্যোগ দুর্বিপাকে যিনি রক্ষা করতেন সেই ‘cyning'
(king) বা গোষ্ঠীপতির প্রতি অনুগত ও গোষ্ঠীর প্রবক্তা তথা তার ঐতিহ্যের বাহক ছিলেন কবি। ভোজসভায় যখন মিলিত হতেন সকলে, পানপাত্রে ঢালা হতো মাধ্বী, তখন হাপে ঝঙ্কার তুলে গান বাঁধতেন কবি, বীরত্বের, বিজয়ের কিংবা বিষাদের গাথা।
অ্যাংলো-স্যাক্সন কবিতার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য বিওউলফ্ (Beowulf),
তিন সহস্রাধিক লাইনের একটি মহাকাব্যোপম রচনা। বিওউলফ নামক এক জার্মান উপজাতীয় বীরের সঙ্গে এক দানব ও পরে এক ভয়ানক ড্রাগনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বীরত্বপূর্ণ রোমাঞ্চকর কাহিনী বিওউলফ। কাব্যে বিবৃত কাহিনীর ঘটনাস্থল ডেনমার্ক-স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চল। এ-বীরগাথা অ্যাঙ্গ লম্বাই নিয়ে এসেছিলো তাদের জার্মান স্বদেশভূমি থেকে। গেয়াট (Geat) দেশের বীর বিওউল্ফ্-এর কীর্তিকলাপ নিয়ে রচিত এই কাব্যে এক প্রাচীন জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক রাজনৈতিক জীবনের প্রামাণিক চিত্র ছাড়াও বীরধর্মের এক আদর্শায়িত রূপ দেখতে পাই আমরা। বর্তমানে প্রচলিত ও অনুসৃত বিওউল্ফ-এর পাণ্ডুলিপি আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টাব্দের প্রাচীন হলেও মূল কবিতা তার বহু আগের রচনা। এর রচয়িতা আমাদের অজ্ঞাত।
বর্ণনামূলক ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহাকাব্যের কিছু লক্ষণযুক্ত অন্য কয়েকটি কবিতার নাম বিওউল্ফ-এর পরে পরেই উল্লেখ করা যায় ; যেমন, উইডসিথ (Widsith)—১৫০ চরণের খণ্ড কবিতা ; দি ব্যাট্ অব ফিসবার (The
Battle of Finnsburh) বিওউল্ফ-এ বর্ণিত ফিন্ আখ্যানের ভিত্তিতে রচিত ৪৮ চরণের খণ্ডাংশ ; দি ব্যাট্ অব ব্রানানবার (The Battle of Brunanburh) ৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত যুদ্ধের বর্ণনা এবং দি ব্যাট্ল অব ম্যালডন (The
Battle of Maldon) ৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যালডনে নর্থমেন আক্রমণকারীদের সঙ্গে যুদ্ধের বীরত্ব-বিষয়ক রচনা।
এক্সেটার ক্যাথিড্রালে রক্ষিত পাণ্ডুলিপিসমূহে সাতটি সংরক্ষিত লিরিকধর্মী কবিতা পাওয়া গেছে। এগুলিকে ব্যক্তিগত শোকগাথা (Personal
Elegies)-র পর্যায়ভুক্ত করা হয়ে থাকে। এগুলির মধ্যে “ডিওর ল্যামেন্ট” (Deor's
Lament), 'দি সিফেয়ারার' (The Seafarer), ‘দি ওয়ান্ডারার’ (The
Wanderer), ‘দি রুইন' (The Ruin) এবং ‘উফ্ অ্যান্ড এয়াড়ওয়াকার' (Wulf and Eadwacer) উল্লেখের দাবি রাখে।
খ্রিস্টধর্ম-বিষয়ক কবিতার ক্ষেত্রে দু'টি নাম অ্যাংলো-স্যাক্সন সাহিত্যে স্মরণীয়—কিডম (Caedmon) ও কিনেউল্ল্ফ (Cynewulf)। কিডমন্ ছিলেন হুইটবি গির্জার একজন যাজক যিনি দৈবী শক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ‘জেনেসিস' (Genesis), 'এক্সোডাস্' (Exodus), 'ড্যানিয়েল' (Daniel) ও 'ক্রাইস্ট অ্যান্ড সেটান' (Christ
and Satan) এই চারটি কবিতা কিডমন-এর রচিত বলে সাারণভাবে মনে করা হয়। অন্যদিকে কিনেউল্য্ নামে প্রকৃত কোনো কবির পরিচয় জানা না থাকলেও তাঁর স্বাক্ষরিত চারটি কবিতা পাওয়া গেছে, ‘ক্রাইস্ট' (Christ)
'এলেনি' (Elene) 'ফেট্স্ অব দ্য অ্যাপোলস্' (Fates of
the Apostles) ও 'জুলিয়ানা' (Juliana)। অন্য চারটি রচনা—'দ্য ড্রিম অব দ্য রুড্ (The Dream of the Rood) 'অ্যানড্রিয়াস' (Andreas), 'গুথল্যাক' (Guthlac) এবং 'দ্য ফিনিক্স' (The Phoenix) কিনেউলফীয় ধারার অনুবর্তী বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে প্রথম কবিতাটি অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময়ে রচিত্ব ও ক্রুশ প্রতীককে আশ্রয় করে খ্রিস্টধর্মের মরমি দিকের এক চমৎকার উন্মোচন। শেষোক্ত দ্য ফিনিক্স' পশু-পাখিদের রূপক কাহিনী অবলম্বনে ধর্মীয় ভাবনা প্রচারের এক সার্থক নিদর্শন।
রাজা আলফ্রেড ছিলেন অ্যাংলো-স্যাক্সন গদ্যের জনক। তিনি ছিলেন প্রধানত একজন অনুবাদক তথা সৃজনকর্মের একজন উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক। তাঁর আমলেই অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিক্ল্ (The Anglo
Saxon Chronicle)-এর মতো ঐতিহাসিক কোষগ্রন্থের নিয়মিত রচনা শুরু হয়। আলফ্রেড নিজে অনুবাদ করেছিলেন পোপ গ্রেগরির কিউরা প্যাস্টোরালিস্ (Cura Pastoralis) এবং বোথিয়াসের কনসোলেশান অব ফিলজফি (Consolatioin of Philosophy)। এ ছাড়া তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুদিত হয়েছিলো বিড (Bede)-এর ইউনিভার্সাল হিস্ট্রি (Universal History)। সন্ত অগাস্টাইনের সলিলোকিয়া (
Soliloquia) - ও আলফ্রেড অনুবাদ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের অপরাপর গদ্যলেখকদের মধ্যে ছিলেন এইলফ্রিক (Aelfric) ও উস্টান
(Wulfstan), দুজনেই খ্রিস্টান সন্ন্যাসী। এইলফ্রিক-বিরচিত ক্যাথলিক হোমিলিজ (Catholic
Homilies) এবং লাইভস্ অব দি সেন্ট (Lives of
the Saints) ধর্মবাণী প্রচারের অভিপ্রায়ে সহজ ভাষায় কথোপকথনের রীতিতে লিখিত। লাতিন ব্যাকরণও অনুবাদ করেছিলেন এই যাজক গদ্যনির্মাতা। এইলফ্রিকের গদ্য যেখানে সাবলীল ও ঋজু, উল্ফস্টানের গদ্য সেখানে আবেগমণ্ডিত ও জমকালো। উস্টানের উল্লেখযোগ্য রচনা সামন টু দ্য-ইংলিশ (Sermon to the English)। এই রচনাটিতে ড্যানিশ আক্রমণ ও তার ভয়াবহ অরাজকতার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন উলস্টান।
Read More :
1. অ্যাংলো স্যাক্সন যুগ
2. অ্যাংলো নরম্যান যুগ : ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস
3.মধ্যযুগে নাটকের ক্রমবিবর্তন(1) : ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস
https://spotcounsellingjobstar.blogspot.com/2024/02/blog-post.html
4. মধ্যযুগে নাটকের ক্রমবিবর্তন(2) : ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস
0 Comments